কোন কোন রোগ শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে?
ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। এটি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য, পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট রোগ এবং শারীরিক অবস্থা ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো কোন কোন রোগ শরীরে ভিটামিন ডি-এর পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়।
১. কিডনি রোগ
কিডনি আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর সক্রিয় রূপ তৈরি করতে সাহায্য করে। তবে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে (CKD) আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা যায় কারণ কিডনি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি সক্রিয় করতে পারে না।
২. লিভারের রোগ
লিভার রোগ যেমন সিরোসিস বা হেপাটাইটিসের কারণে শরীর ভিটামিন ডি সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে পারে না, যার ফলে এর ঘাটতি দেখা দেয়।
৩. অস্টিওপোরোসিস
অস্থির ঘনত্ব কমে যাওয়া বা অস্টিওপোরোসিস রোগের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-এর অভাব বেশ সাধারণ। কারণ ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৪. হাইপোপ্যারাথাইরয়েডিজম
এটি একটি হরমোনজনিত রোগ যেখানে প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি পর্যাপ্ত হরমোন তৈরি করতে পারে না। এতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায় এবং ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
৫. মোটা হওয়া বা স্থূলতা
মোটা ব্যক্তিদের শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাটের কারণে ভিটামিন ডি জমা হয়ে যায়, ফলে এটি সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে না। এ কারণে স্থূল ব্যক্তিদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি বেশি দেখা যায়।
৬. অন্ত্রের রোগ
ক্রোহনস ডিজিজ, সেলিয়াক ডিজিজ বা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS)-এর মতো রোগগুলো অন্ত্রে পুষ্টি শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে শরীর পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে পারে না।
৭. দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য সহ্য করতে না পারা
যারা দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্য খেতে পারেন না, তাদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে, কারণ দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য ভিটামিন ডি-এর অন্যতম প্রধান উৎস।
৮. অটোইমিউন রোগ
অটোইমিউন রোগ যেমন মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, টাইপ ১ ডায়াবেটিস, বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা প্রায়শই কম থাকে।
৯. বয়স বৃদ্ধির কারণে
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ত্বক সূর্যালোক থেকে কম ভিটামিন ডি উৎপাদন করে, যা শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির অন্যতম কারণ।
প্রতিরোধের উপায়
প্রতিদিন কমপক্ষে ২০-৩০ মিনিট সূর্যালোকের সংস্পর্শে থাকুন।
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খান, যেমন সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম, দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য ও মাশরুম।
ডাক্তার পরামর্শ দিলে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।
উপসংহার
ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি অনেক গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে, আবার কিছু রোগের কারণে শরীরে ভিটামিন ডি-এর পরিমাণও কমে যেতে পারে। তাই সচেতনভাবে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির লক্ষণ দেখা যায়, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আপনার মুল্যবান বক্তব্য লিখুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url