সহিংসতা প্রভাব ফেলেছে রেমিট্যান্স প্রবাহেও

কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে দেশে সংঘটিত সপ্তাহব্যাপী সহিংস পরিস্থিতির প্রভাব প্রবাসী আয়ের ওপরও পড়েছে। ১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ইন্টারনেট শাটডাউন এবং সহিংসতা দমনের জন্য সরকারের কারফিউ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণার কারণে দেশের আর্থিক খাত প্রায় এক সপ্তাহের জন্য স্থবির ছিল। এই সময়কালে ব্যাংকিং কার্যক্রম মাত্র একদিনই চলেছে।

১৯ জুলাই রাতে সহিংসতা প্রতিহত ও দুর্বৃত্তদের দমনের জন্য কারফিউ জারি করে সরকার। এরপর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট শাটডাউনের কারণে অনলাইন ব্যাংকিংও বন্ধ ছিল। ২৪ জুলাই বুধবার ব্যাংক চালু হলেও লেনদেন হয়েছে মাত্র সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত। ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে প্রবাসীরা বিদেশ থেকে অর্থ প্রেরণ করলেও তা বাংলাদেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে পৌঁছাতে পারেনি। এর ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ছয়দিনে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অথচ চলতি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাৎ ১৮ থেকে ২৪ জুলাই এই ছয়দিনে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে, তা আগের প্রতিদিনের গড় আয়ের থেকেও কম। তবে চলতি মাসের প্রথম ১৮ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশ ভালো ছিল। গত বছর ১ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছিল ১২৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা চলতি বছরে ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে, অর্থাৎ প্রায় ১৩ কোটি ডলার বেশি।

বিশ্লেষকদের মতে, সহিংসতার কারণে আর্থিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার প্রভাব পুরো জুলাই মাসের রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর পড়তে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ জুলাই পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫০ কোটি ডলার, যেখানে গত বছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ১৫৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

তবে ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ায় এবং ইন্টারনেট ফিরে আসায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ফের স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, গত এক সপ্তাহে জমে থাকা রেমিট্যান্সগুলো রোববার থেকে ব্যাংকগুলোতে আসতে শুরু করবে। এর ফলে মাসের বাকি কয়েকটি দিনে রেমিট্যান্স আসার গতি বাড়তে পারে। রবি ও সোমবার রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত বলতে পারবো।’ তিনি আরও জানান, ‘ইন্টারনেট শাটডাউন ও কারফিউর কারণে সবকিছু প্রায় এক সপ্তাহ বন্ধ ছিল, যার প্রভাব রেমিট্যান্স প্রবাহে পড়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তা আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।’

প্রবাসীদের মাঝে দেশে আয় না পাঠানোর জন্য একটি মহল প্রচারণা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মেজবাউল হক বলেন, ‘এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয় নয়। তাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাই না।’ তবে প্রবাসী আয় বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় সচেষ্ট রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার মুল্যবান বক্তব্য লিখুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪