সাপের চেয়েও বিপজ্জনক প্রাণী: মশা

আমরা প্রায়ই সাপকে সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করি, কারণ এর বিষাক্ত কামড় মানুষের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে, আমাদের ঘরের কাছাকাছি এমন একটি প্রাণী রয়েছে যা সাপের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। এটি হলো মশা। মশা ছোট হলেও এটি বিভিন্ন মারাত্মক রোগের বাহক, যা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ।মশা একাধিক রোগের বাহক এবং তার মাধ্যমে রোগ ছড়ায়, যা মানুষের জন্য মারাত্মক হতে পারে। মশা যে সব রোগ ছড়ায় তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রাণঘাতী হলো ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, জিকা ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া এবং পশ্চিম নাইল ভাইরাস।


মশার ছড়ানো রোগসমূহ

ম্যালেরিয়া

ম্যালেরিয়া হলো প্লাজমোডিয়াম প্যারাসাইট দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ, যা সংক্রামিত অ্যানোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। ম্যালেরিয়ার প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, শীতল হওয়া, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব এবং মাংসপেশীর ব্যথা। এ রোগটি দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং অনেকের মৃত্যু হয়, বিশেষ করে আফ্রিকা অঞ্চলে।

ডেঙ্গু

ডেঙ্গু হলো এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ানো একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, জয়েন্ট এবং মাংসপেশীর ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং ত্বকের র‍্যাশ। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের মতো মারাত্মক পরিস্থিতির কারণ হতে পারে, যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

জিকা ভাইরাস

জিকা ভাইরাস এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং এটি প্রধানত হালকা জ্বর, ত্বকের র‍্যাশ, মাংসপেশীর ব্যথা এবং চোখের লালচে হওয়ার কারণ হয়। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি বিশেষভাবে বিপজ্জনক, কারণ এটি ভ্রূণের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং জন্মগত ত্রুটি, যেমন মাইক্রোসেফালি হতে পারে।

চিকুনগুনিয়া

চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এটি তীব্র জ্বর এবং মাংসপেশীর ব্যথার কারণ হতে পারে, যা দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, রোগী মাসব্যাপী বা তারও বেশি সময় ধরে ব্যথা অনুভব করতে পারে।

পশ্চিম নাইল ভাইরাস

পশ্চিম নাইল ভাইরাস একটি ভাইরাস যা মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং এটি নিউরোইনভেসিভ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এটি মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনসেফালাইটিস) এবং মেনিনজাইটিসের কারণ হতে পারে, যা মারাত্মক হতে পারে।

মশা প্রতিরোধের উপায়

মশা দ্বারা ছড়ানো রোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস করা, মশার কামড় থেকে বাঁচতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কেমিক্যাল এবং বায়োলজিকাল পদ্ধতি ব্যবহার করা।

মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস

মশা সাধারণত স্থির পানিতে ডিম পাড়ে। তাই আমাদের উচিত আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা এবং যেকোনো স্থির পানির পাত্র সরিয়ে ফেলা।

মশারি ব্যবহার

মশার কামড় থেকে বাঁচতে রাতে মশারি ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া দরজা ও জানালায় মশার জাল লাগিয়ে মশা প্রবেশ রোধ করা যেতে পারে।

মশা প্রতিরোধক স্প্রে

মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে মশা প্রতিরোধক স্প্রে বা লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব প্রতিরোধক সাধারণত DEET, পিকারিডিন বা লেমন ইউক্যালিপটাস অয়েল থেকে তৈরি হয়।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

পরিবেশ পরিষ্কার রাখা এবং যেকোনো স্থির পানির উৎস ধ্বংস করা মশার প্রজনন রোধে সহায়ক হতে পারে। এছাড়া ব্যবহৃত পানির পাত্র ঢেকে রাখা এবং বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করা উচিত।

উপসংহার

মশা সাপের চেয়েও বিপজ্জনক প্রাণী হিসেবে পরিচিত, কারণ এটি মারাত্মক রোগ ছড়ায় যা বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। মশার বিস্তার রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমরা মশা বাহিত রোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। সাপের কামড় থেকে বাঁচার পাশাপাশি, আমাদের মশার কামড় থেকেও নিজেদের রক্ষা করা প্রয়োজন।

মশা দ্বারা ছড়ানো রোগগুলির ব্যাপকতা এবং তাদের প্রতিরোধের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা, মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস করা এবং ব্যক্তিগত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমরা মশার কামড় এবং এর ফলে সৃষ্ট মারাত্মক রোগগুলি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার মুল্যবান বক্তব্য লিখুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪