নীলগিরি ভ্রমণ

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আরেকটি নাম হলো নীলগিরি। চারদিকে মেঘের লুকোচুরি এবং সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। এ কারণেই নীলগিরিকে বাংলার দার্জিলিং বলা হয়।

অবস্থান

নীলগিরি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবান জেলায় তেংপ্লং চূড়া পাহাড়ের শীর্ষে অবস্থিত। এটি বান্দরবন শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে এবং এর উচ্চতা প্রায় ২২০০ ফুট। বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানগুলির মধ্যে নীলগিরি একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে, যা মেঘের রাজ্য হিসেবে পরিচিত।

নিরাপত্তা ও সুবিধা

নীলগিরি পরিচালিত হয় সেনাবাহিনী দ্বারা, তাই এখানে আপনি সব ধরনের নিরাপত্তা পাবেন। যেকোনো সমস্যায় তারা সহায়তা করবে। নীলগিরির শীর্ষ থেকে আপনি সারি সারি পাহাড়, বগালেক, কেওক্রাডং, সাকাহাফং, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত এবং সাঙ্গু নদী দেখতে পারবেন। নীলগিরির কাছাকাছি আদিবাসীদের গ্রাম রয়েছে, যেখানে গেলে তাদের জীবনযাপন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকার কারণে আপনি নিশ্চিন্তে পরিবার, বন্ধু বা আত্মীয়স্বজন নিয়ে আসতে পারেন।

ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

নীলগিরি আপনি বছরের যে কোনো সময় আসতে পারেন। প্রতিটি ঋতুতেই নীলগিরির ভিন্ন ভিন্ন রূপ থাকে। সকালে একরকম দৃশ্য, সন্ধ্যায় অন্যরকম। জ্যোৎস্না রাতে নীলগিরির পরিবেশ এত সুন্দর থাকে যে, মন চাইবে কল্পনায় হারিয়ে যেতে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য বিশেষভাবে মনোমুগ্ধকর। বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তে মেঘের খেলা উপভোগ করা যায়। যদি আপনি মেঘের রাজ্যে ভাসতে চান, তবে শরৎ ও হেমন্তকালই ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। শীতকালে চারিদিকে কুয়াশায় ঘেরা থাকে।

যাতায়াত ব্যবস্থা

নীলগিরি যেতে হলে প্রথমে আপনাকে বান্দরবান শহরে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বান্দরবান যাওয়ার জন্য শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, এস. আলম, ডলফিন, সেন্টমার্টিন ও ইউনিক ইত্যাদি পরিবহন পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে বান্দরবান যেতে সময় লাগে ৮-১০ ঘন্টা। বাসের ভাড়া সাধারণত ৮৫০ থেকে ১৮০০ টাকা। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার সুবর্ণ এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী ও মহানগর গোধূলি ট্রেনগুলোর ভাড়া ৩৪৫ থেকে ১১৭৯ টাকা এবং সময় লাগে ৫.৫ থেকে ৭.৫ ঘন্টা। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যাওয়ার বাসের ভাড়া ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

বান্দরবান থেকে নীলগিরি

বান্দরবান থেকে নীলগিরি যাওয়ার জন্য চাঁন্দের গাড়ি, জীপ গাড়ি, মাহেন্দ্র ও সিএনজি ব্যবহার করতে পারেন। চাঁন্দের গাড়ি ভাড়া ৮,৫০০ টাকা, জীপ গাড়ি ভাড়া ৫,৫০০ টাকা এবং দুই দিনের সিএনজি ভাড়া ৩,০০০ টাকা। বাসে গেলে ভাড়া কম হবে, কিন্তু চাঁন্দের গাড়ি বা জীপ গাড়ি রিজার্ভ করে গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। নীলগিরিতে প্রবেশ করতে জনপ্রতি টিকিট মূল্য ৫০ টাকা এবং গাড়ি পার্কিং ফি ৩০০ টাকা।

ট্যুর প্ল্যান

নীলগিরি যাওয়ার পথে শৈল প্রপাত ঝর্ণা, মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট, সাইরু হিল রিসোর্ট, চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্র ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে পারেন। যদি আপনার হাতে সময় থাকে, তাহলে আসার সময় এই স্থানগুলো দেখে যেতে পারেন। একরাত থেকে পরের দিনের সৌন্দর্য উপভোগ করেও ফিরে আসতে পারেন।

হোটেল ও রিসোর্ট

নীলগিরি রিসোর্টটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত, যেখানে থাকার জন্য ৬টি কটেজ রয়েছে। রুমের ভাড়া ৮০০০ টাকা থেকে শুরু করে। অগ্রিম বুকিং না দিলে রুম পাওয়া মুশকিল। বান্দরবান শহরে কিছু উল্লেখযোগ্য হোটেল হলো হোটেল হিল ভিউ, হোটেল হিলটন, হোটেল প্লাজা, রিভার ভিউ ও পর্যটন মোটেল। ভাড়া ৬০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে।

খরচ

নীলগিরি ভ্রমণে খরচ নির্ভর করে ভ্রমণের সময়, যাতায়াত, কোথায় থাকবেন এবং কী খাবেন তার উপর। সিজনে (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) খরচ কিছুটা বেশি হয়। অফসিজনে সবকিছুতে দাম কম এবং হোটেলগুলোতে ছাড় পাওয়া যায়।

খাবার ব্যবস্থা

নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে খাবারের জন্য একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে জনপ্রতি খাবারের খরচ ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। তবে আপনি চাইলে বান্দরবান শহরে ফিরে গিয়ে খাবার খেতে পারেন। কিছু উল্লেখযোগ্য রেস্টুরেন্ট হলো রুপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট, ফুড প্লেস রেস্টুরেন্ট, তাজিং ডং ক্যাফে, রী সং, কলাপাতা রেস্টুরেন্ট এবং মেঘদূত ক্যাফে।

উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান

নীলগিরির চারপাশে চিম্বুক পাহাড়, বগালেক, সাইরু হিল রিসোর্ট, শৈল প্রপাত, স্বর্ণমন্দির, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, নীলাচল ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

ভ্রমণ টিপস

ভ্রমণের সময় প্রয়োজনীয় ঔষুধ ও খাবার পানি সাথে রাখুন। কিছু শুকনা খাবার নিতে পারেন। ছুটির দিনগুলোতে ট্যুর প্ল্যান থাকলে অগ্রিম বাসের টিকিট কেটে রাখার চেষ্টা করবেন। সিজনে গেলে হোটেল বা রিসোর্ট অগ্রিম বুকিং করে নেয়া ভালো। যে হোটেল বা রিসোর্টে থাকবেন তার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। জীপ গাড়ি বা চাঁন্দের গাড়ি রিজার্ভ করতে হলে বান্দরবান জীপ স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি কথা বলে রিজার্ভ করুন। আদিবাসীদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন এবং ছবি তোলার আগে অনুমতি নিন। পাহাড়ি পথ তাই সব সময় সতর্কভাবে চলাচল করুন। জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি সাথে রাখুন এবং গ্রুপ করে গেলে খরচ কম হয়। পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখুন।

বিশেষ বার্তা

ভ্রমণের সময় সঠিক তথ্য ও বর্তমান ভাড়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন। সর্বদা দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন এবং অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার মুল্যবান বক্তব্য লিখুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪