সারাদেশে বাড়ছে রাসেল ভাইপারের আতঙ্ক
সারাদেশে এখন একটা ভয়ানক আতঙ্কের নাম হলো রাসেল ভাইপার। কিছুদিন আগেও এই বিষধর সাপটির দেখা মিলত শুধু চরাঞ্চলে। কিন্তু এখন লোকালয়েও দেখা যাচ্ছে, ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা সাপ পিটিয়ে মারার ছবি এবং ভিডিও নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করছেন। বরেন্দ্র এলাকা থেকে শুরু করে বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, দিনাজপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, এমনকি ঢাকার আশপাশেও রাসেল ভাইপারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে এটি ২৫টি জেলায় বিস্তার লাভ করেছে।
রাসেল ভাইপার পরিচিতি
বাংলাদেশে যত সাপ দেখা যায়, তার মধ্যে রাসেল ভাইপার সবচেয়ে বিষাক্ত। চলতি বছরে এই সাপের কামড়ে ১০ জন মারা গেছেন। রাসেল ভাইপার বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামেও পরিচিত। দেখতে অনেকটা অজগরের বাচ্চার মতো। দৈর্ঘ্যে তিন থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। মাথা চ্যাপ্টা, ত্রিভুজাকার এবং ঘাড় থেকে আলাদা। শরীরজুড়ে চাঁদের মতো গাঢ় বাদামি গোল গোল দাগ আছে, যা শুকনো পাতা বা ধান ক্ষেতের মধ্যে খুব সহজেই লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে।
রাসেল ভাইপারের বিষ এবং প্রভাব
রাসেল ভাইপারের কামড় শরীরের দংশিত অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি, ক্রমাগত রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে যাওয়া, পক্ষাঘাত, কিডনির ক্ষতিসহ বিভিন্ন রকম শারীরিক উপসর্গ সৃষ্টি করে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই সাপ বাংলাদেশ থেকে বহু বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু গত ১০-১২ বছর ধরে আবারও এই সাপের কামড়ের ঘটনা পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশে রাসেল ভাইপারের পুনরাবির্ভাব
বাংলাদেশে রাসেল ভাইপারের পুনরাবির্ভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান। ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত রাসেল ভাইপারের কামড়ের ২০টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে তিনি একটি গবেষণা করেন, যা ২০১৮ সালে জার্নাল অব দি এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়। গবেষণায় উঠে আসে, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৭টি জেলায় রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি রয়েছে। উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতেই এই সাপের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল।
কেন বাড়ছে রাসেল ভাইপার
অধ্যাপক ফরিদ আহসান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাসেল ভাইপারের সংখ্যা বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল ফলানো। আগে কৃষিজমিতে বছরে একবার বা দুইবার ফসল ফলানো হত, এবং বাকি সময় পানির অভাব থাকায় জমি পরিত্যক্ত পড়ে থাকতো। ৯০-এর দশকে সেচ পদ্ধতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা বছরে দুই থেকে তিনটি ফসল ফলানো শুরু করেন এবং জমি কম সময় পরিত্যক্ত থাকতে শুরু করে। ফলে জমিতে ইঁদুরের সংখ্যা বাড়তে থাকে, যা রাসেল ভাইপারের প্রধান খাদ্য। ইঁদুর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাপ পর্যাপ্ত খাদ্য পেয়ে বংশবিস্তারের জন্য যথাযথ পরিবেশ পেতে থাকে।
রাসেল ভাইপারের প্রজনন
বেশির ভাগ সাপ ডিম পাড়লেও রাসেল ভাইপার বাচ্চা দেয়। গর্ভধারণ শেষে স্ত্রী রাসেল ভাইপার সাধারণত ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়। তবে ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়ার রেকর্ডও আছে।
আরো পড়ুনঃ রাসেলের ভাইপারের পরিচিতি
রাসেল ভাইপার থেকে বাঁচার উপায়
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাপ দংশন করলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। ওঝার বাড়িতে গিয়ে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। এতে বিষক্রিয়া পুরোপুরি প্রকাশ পেয়ে গেলে আইসিইউ সাপোর্ট ছাড়া রোগীকে বাঁচানো যাবে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, অ্যান্টিভেনম উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছে। যেসব এলাকায় সাপের উপদ্রব বেশি, সেসব এলাকায় সংরক্ষিত অ্যান্টিভেনম রয়েছে।
উপসংহার
রাসেল ভাইপার বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব।
আপনার মুল্যবান বক্তব্য লিখুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url